নারীর গোপনাঙ্গের শত্রু যখন ফাঙ্গাস

নারীদের গোপনাঙ্গ বা যৌনাঙ্গ বেশ স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। এই অঙ্গটির একটি চেনা সমস্যা ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন বা ক্যানডিডিয়াসিস। রোগটির উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো- যোনি থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, সহবাস বা মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালা করা, যৌনাঙ্গে চুলকানি ইত্যাদি। সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশনের (এসটিআই) ক্ষেত্রেও এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। 

 

লজ্জায় এই সমস্যাগুলো নিয়ে বেশিরভাগ নারীই মুখ খোলেন না। কিন্তু ইস্ট বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণে হওয়া এই স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানলে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে খুব সহজে পরিত্রাণ মেলে।

 

যৌনাঙ্গে ফাঙ্গাসের আক্রমণ : ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন বা ক্যানডিডিয়াসিসের উৎপত্তি হয় ক্যানডিডা নামে এক ধরনের ফাঙ্গাস থেকে। শরীরের বাইরে বা ভেতরে যেকোনো স্থানে এর আক্রমণ হতে পারে। কোনো ক্ষতি করা ছাড়াই গলা, মুখের অভ্যন্তরীণ, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি স্থানে এই ইস্ট থাকতে পারে। কোনো কারণে এটি যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণের আকার ধারণ করে।

 

কেন হয়? : বিভিন্ন কারণেই ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন হতে পারে। হরমোনের তারতম্য, শরীরের অনাক্রম্যতার পার্থক্য, বিভিন্ন ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব দেহে ক্যানডিডার গ্রোথ বাড়াতে পারে। আর তখনই তা ইনফেকশনের রূপ নেয় এবং পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে।

উপসর্গ: যৌনাঙ্গের চারপাশে এবং ভিতরে চুলকানি
যৌনাঙ্গ লাল হয়ে যাওয়া
সহবাসের সময়ে ব্যথা বা জ্বালা করা
মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালা করা
যৌনাঙ্গ থেকে অতিরিক্ত সাদা, দুর্গন্ধহীন স্রাব নিঃসরণ

এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এসটিআই কিংবা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের উপসর্গও কাছাকাছি হয়ে থাকে। শুরুতে সচেতন না হলে এই সমস্যা পরবর্তীতে অন্যান্য অসুখের কারণ হতে পারে।

 

ঝুঁকিতে কারা? : যেকোনো বয়সী নারীই ইস্ট ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত পিউবার্টির আগে কিংবা মেনোপজের পরে এই রোগের উপসর্গ দেখা যায় না।

 

গর্ভধারণ কালে, হরমোনাল বার্থ কন্ট্রোল পিল সেবন করলে, নিয়মিত স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক খেলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে এই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করলে এমন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

 

প্রতিকারের উপায় : সাধারণত চিকিৎসক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের সাহায্যেই এই ধরনের ইনফেকশন সারিয়ে তোলেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম ব্যবহার বা ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনার ইস্ট ইনফেকশনই হয়েছে, নাকি অন্য যৌনবাহিত সংক্রমণ তা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

 

সাবধানতা আবশ্যিক: যৌনাঙ্গের সাধারণ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পাশাপাশি আরও কিছু নিয়ম মেনে চলুন।

 

জেট স্প্রে ওয়াশের মাধ্যমে কখনোই যৌনাঙ্গের ভিতরে সজোরে পানি দেবেন না। এতে ভালো কিছু ব্যাকটেরিয়াও ধুয়ে চলে যায়। এগুলো যৌনাঙ্গকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

যৌনাঙ্গে বাবল বাথ, স্প্রে, সুগন্ধি প্যাড কিংবা ট্যাম্পনের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সাবান দিয়ে কখনোই যৌনাঙ্গের ভেতর পরিষ্কার করবেন না।

 

পিরিয়ড চলাকালীন নির্দিষ্ট সময় পর পর প্যাড, প্যান্টি পাল্টে পরুন। খুব টাইট অন্তর্বাস পরবেন না। অনেক সময়ে বেশিক্ষণ আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরে থাকলে ঘাম ও ময়শ্চারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।

 

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

» বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে বিএনপির শুভেচ্ছা

» আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিতাসের সতর্কবার্তা

» জুলাই আন্দোলন দমাতে ব্যবহৃত হয় শুটিং ফেডারেশনের অস্ত্র: ক্রীড়া উপদেষ্টা

» ৭১ এর রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে : উপদেষ্টা শারমীন

» একজন মুসল্লির মতো এলেন জীর্ণশীর্ণ দেখতে, এমন শাসক আর শাসনই আমাদের স্বপ্নময় ছিল! : প্রেস সচিব

» হুয়াওয়ে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২৫ বাংলাদেশ’-এর নিবন্ধন শুরু

» লোকসাহিত্য গবেষক ও কবি অ আ আবীর আকাশ এর জন্মদিনে বিভিন্ন মহলের উষ্ণ অভ্যর্থনা

» প্রাইম ব্যাংকের অগ্রযাত্রার ৩০ বছর: টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার

» বাগেরহাটের বলভদ্রপুর বাস-ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নারীর গোপনাঙ্গের শত্রু যখন ফাঙ্গাস

নারীদের গোপনাঙ্গ বা যৌনাঙ্গ বেশ স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। এই অঙ্গটির একটি চেনা সমস্যা ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন বা ক্যানডিডিয়াসিস। রোগটির উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো- যোনি থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, সহবাস বা মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালা করা, যৌনাঙ্গে চুলকানি ইত্যাদি। সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশনের (এসটিআই) ক্ষেত্রেও এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। 

 

লজ্জায় এই সমস্যাগুলো নিয়ে বেশিরভাগ নারীই মুখ খোলেন না। কিন্তু ইস্ট বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণে হওয়া এই স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানলে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে খুব সহজে পরিত্রাণ মেলে।

 

যৌনাঙ্গে ফাঙ্গাসের আক্রমণ : ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন বা ক্যানডিডিয়াসিসের উৎপত্তি হয় ক্যানডিডা নামে এক ধরনের ফাঙ্গাস থেকে। শরীরের বাইরে বা ভেতরে যেকোনো স্থানে এর আক্রমণ হতে পারে। কোনো ক্ষতি করা ছাড়াই গলা, মুখের অভ্যন্তরীণ, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি স্থানে এই ইস্ট থাকতে পারে। কোনো কারণে এটি যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণের আকার ধারণ করে।

 

কেন হয়? : বিভিন্ন কারণেই ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন হতে পারে। হরমোনের তারতম্য, শরীরের অনাক্রম্যতার পার্থক্য, বিভিন্ন ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব দেহে ক্যানডিডার গ্রোথ বাড়াতে পারে। আর তখনই তা ইনফেকশনের রূপ নেয় এবং পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে।

উপসর্গ: যৌনাঙ্গের চারপাশে এবং ভিতরে চুলকানি
যৌনাঙ্গ লাল হয়ে যাওয়া
সহবাসের সময়ে ব্যথা বা জ্বালা করা
মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালা করা
যৌনাঙ্গ থেকে অতিরিক্ত সাদা, দুর্গন্ধহীন স্রাব নিঃসরণ

এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এসটিআই কিংবা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের উপসর্গও কাছাকাছি হয়ে থাকে। শুরুতে সচেতন না হলে এই সমস্যা পরবর্তীতে অন্যান্য অসুখের কারণ হতে পারে।

 

ঝুঁকিতে কারা? : যেকোনো বয়সী নারীই ইস্ট ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত পিউবার্টির আগে কিংবা মেনোপজের পরে এই রোগের উপসর্গ দেখা যায় না।

 

গর্ভধারণ কালে, হরমোনাল বার্থ কন্ট্রোল পিল সেবন করলে, নিয়মিত স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক খেলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে এই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করলে এমন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

 

প্রতিকারের উপায় : সাধারণত চিকিৎসক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের সাহায্যেই এই ধরনের ইনফেকশন সারিয়ে তোলেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম ব্যবহার বা ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনার ইস্ট ইনফেকশনই হয়েছে, নাকি অন্য যৌনবাহিত সংক্রমণ তা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

 

সাবধানতা আবশ্যিক: যৌনাঙ্গের সাধারণ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পাশাপাশি আরও কিছু নিয়ম মেনে চলুন।

 

জেট স্প্রে ওয়াশের মাধ্যমে কখনোই যৌনাঙ্গের ভিতরে সজোরে পানি দেবেন না। এতে ভালো কিছু ব্যাকটেরিয়াও ধুয়ে চলে যায়। এগুলো যৌনাঙ্গকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

যৌনাঙ্গে বাবল বাথ, স্প্রে, সুগন্ধি প্যাড কিংবা ট্যাম্পনের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সাবান দিয়ে কখনোই যৌনাঙ্গের ভেতর পরিষ্কার করবেন না।

 

পিরিয়ড চলাকালীন নির্দিষ্ট সময় পর পর প্যাড, প্যান্টি পাল্টে পরুন। খুব টাইট অন্তর্বাস পরবেন না। অনেক সময়ে বেশিক্ষণ আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরে থাকলে ঘাম ও ময়শ্চারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।

 

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com